অবিশ্বাস্য
১
সেদিন একটা মজার ব্যাপার ঘটেছে। আমরা আমাদের বাড়ীর পাশের মাঠে খেলাধুলো করি। বিশেষ করে ফুটবলই খেলি। আজও খেলা হয়েছে। সন্ধ্যেও হয়েছে। সবাই চলে গেছে, শুধু আমি গোলে শট প্র্যাকটিস করছি। চারপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছিল তখন। আমি বাড়ী যাব ভাবছি। এমন সময় দেখি মাঠে যে নিমগাছটা তার কোটর থেকে এক উজ্জ্বল আলোর রেখা বেরিয়ে আসছে। আমি ভয় পাবার ছেলে নই। আমার ভয়ানক কৌতূহল হল। আমি ছুটে গেলাম গাছের নীচে। গাছ বেয়ে উঠে জিনিষটা নামিয়ে আনলাম। দেখলাম একটা ছোট্ট শুয়োর ছানার মত কি একটা। তবে কাঠের। হঠাৎ খেয়াল হল রাত্রি হয়ে আসছে। আমি দৌড়ে ফিরে এলাম। বস্তুটিকে রেখে দিলাম আমার ঘরের তাকে। তারপর হাত মুখ ধুয়ে পড়তে বসলাম। এই হল ঘটনা। তারপর পড়াশোনা শেষ করে খেতে গেলাম। খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি একা শুই। অন্যদিন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। আজকে ঘুম আসছিল না। মনে মনে নানা কথা চিন্তা করতে লাগলাম। এই জিনিষটি কি? আজই কে এখানে রেখে গেল? ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
২
সবে খানিকক্ষণ ঘুমিয়েছি। হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল এক বিশ্রী দুঃস্বপ্ন দেখে। মনে হল কে যেন আমাকে গলা টিপে বলছে, “আমাকে আমার জায়গায় রেখে আয়।” দেখলাম এই শীতেই ঘেমে গেছি। এক গ্লাস জল খেয়ে আবার শোব ভাবছি এমন সময় চোখ পড়ল বিকেলে আনা বস্তুটির দিকে। মনে হল ওটা যেন জায়গা থেকে সরে গেছে। ভাবলাম বোন হয়ত সরিয়েছে। আবার পড়লাম শুয়ে। বাকী রাতটুকু তারপর নির্ভয়ে কাটল।
৩
আবার সেই একই স্বপ্ন ও একই কথা শুনে আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগল। তারপরের দিন স্কুল কামাই করলাম। পড়াশোনা শেষ করে বন্ধু দীপনকে নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনায় বসলাম। দীপন শোব শুনে বলল, “আচ্ছা সনু, (আমার পুরো নাম সনৎ) তুই যখন থেকে বস্তুটা পেলি সেদিন থেকেই স্বপ্নটা দেখতে লাগলি?” আমি বললাম, “হ্যাঁ।” তারপর ও বলল, “দেখি তো জিনিষটা।” দেখে ও বলল, “আজ আমি তোর সঙ্গে শোব। দেখি ও জিনিষটা কি কীর্তি দেখায়।” যথাসময়ে ও চলে এল। আমার দুজনে ও ঘরে শুতে চলে গেলেম। মাঝরাতে আবার ঘুম ভেঙ্গে গেল ঐ স্বপ্নটা দেখে। দেখি দীপন ঐ বিদঘুটে বস্তুটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। আমি ডাকতেই ও পিছু ফিরল। বলল, “আমিও একই স্বপ্ন ও কথা সুনেছি রে।”
– “তোর কি মনে হল?”
– “মনে হল এই বিদঘুটে বস্তুটাই সবের মূলে।”
– “তাই নাকি?”
– “হ্যাঁ।”
– “ঠিক আছে। তা এখন আমার কর্তব্য কি?”
ও বলল, “এখন তোমার কর্তব্য বস্তুটিকে যথাস্থানে রেখে আসা।”
– “তাহলে আর এই স্বপ্ন দেখতে হবে না তো?”
ও বলল, “না। আশা করি।”
আমি বললাম, “কি করে বুঝলি এটাই যত নষ্টের মূল?” ও বল্ল, “কথাটা শুনে। ওটা বলছিল ‘আমাকে আমার স্থানে রেখে আয়।’ তখন বুঝলাম যে এটাই তুই দুদিন হল বাইরে থেকে এনেছিস। অন্য কোনও জিনিষ যদি বলত তাহলে এতদিন বলেনি কেন? তখন তোকে বললাম গাছের কোটরে রেখে আসতে। যদি আবার এই স্বপ্ন দেখিস তাহলে বুঝতে হবে আমার থিয়োরি ভুল।”
আমি পরের দিনই জিনিষটাকে জায়গায় রেখে এসেছিলাম। তারপর থেকে আর ঐ স্বপ্ন ও ঐ কথা শুনিনি।
সমাপ্ত
১/১০/৯০ (৯ বছর ৩৪৪ দিন বয়সে লেখা)
কি? চেনা চেনা ঠেকছে?
হ্যাঁ, ঠিক ধরেছ। সত্যজিতের “কুটুম কাটাম” থেকে অনুপ্রাণিত।
অবশ্য অত ছোটবেলায় অনুপ্রেরণা শব্দটার মানেই জানতাম না। গল্প লেখার ঝোঁক হয়েছে। কি লিখব মাথায় আসছে না। কিন্তু লিখতে তো কিছু হবেই। মনে পড়ল কয়েকদিন আগে পড়া গল্পটার কথা। একটু এদিক ওদিক করে নামিয়ে দিলাম। সবাইকে পড়ালাম। কেউ কেউ বল্ল “কুটুম কাটাম” এর কথা। এমন ভাব করলাম যেন জীবনে গল্পটার নাম-ই শুনিনি
। আজ স্বীকার করছি। সেদিন “কুটুম কাটাম” থেকে আইডিয়াটা টুকেই লিখেছিলাম এই গল্পটা
।
এটা কুটুম কাটুম থেকে আইডিয়া নেওয়া তা বেশ বোঝা যাচ্ছে।
কিন্তু বয়েসের তুলনায় ভাষা বেশ সুগঠিত বলতে হবে।
অনুপ্রাণিত হওয়াটাও কিন্তু একটা আর্ট, কারণ গণ্ডিটা খুব অস্পষ্ট, এটাও ভাল লাগল
ব্যাকরণবাবু, আমি ছোটবেলায় কি রেটে ‘অনুপ্রাণিত’ গল্প লিখতাম, ভাবতে পারবেন না।
আমার এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন, অনেকটা নিজের জীবন থেকেই নেওয়া।
http://chorjapod.com/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%AD/
ঠিক বলেছ, দাশু। আমরা ছোটবেলায় কত সহজে অনুপ্রাণিত হয়ে যেতাম। শুধু লেখালেখির ক্ষেত্রে নয়, আজাহার কে দেখে কলার তুলে ফিল্ডিং করা, ডোনাল্ডকে দেখে পাউডার জলে গুলে পেস্ট মত বানিয়ে নাকে লাগিয়ে বোলিং করা, শাহরুখকে দেখে মাথায় জল দিয়ে চুল ঝাঁকড়ানো আরও কত কি?
অথচ আজ বড় হয়ে যখন আমার ছেলেকে দেখি “ছোটা ভীম” দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সোফায় লাফাচ্ছে, তখন তাকে বাধা দিই
।